“হাসপাতাল যখন বাড়িতে,করোনা চিকিৎসায় ভয় কিসে”
“করোনা ভাইরাস”একবিংশ শতাব্দির এক নতুন চ্যালেঞ্জ। সারাবিশ্ব এখন ব্যাস্ত করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়। বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র যারা সকল দিক থেকে রোল মডেল হিসাবে ভূমিকা রাখছে তারাও আজ হিমশিম খাচ্ছে এই ভাইরাস মোকাবিলায়।
স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা সামাল দিতে পারছেনা এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দিতে। বিশ্বের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এই করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে কমিউনিটিতে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। ব্যাপকভাবে আক্রান্তের কারনে হাসপাতালগুলো রুগী জায়গা দিতে পারছেনা। ফলে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে রুগী মারা যাচ্ছে রাস্তায়, বাসায় বা অপ্রত্যাশিত কোন জায়গায়। দায়ী করছি হাসপাতালকে, স্বাস্থ্যকর্মীকে সরকারকে। আসলে কি তাই। আসলে এই ভাইরাসকে না জানা,চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে ভূল ধারনা, সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারা, সর্বোপরি ভয় আমাদের এই পরিণতিতে নিয়ে এসেছে।
করোনা থেকে বাচতে হলে করোনাকে নিয়েই বাঁচতে হবে। ভয় পেয়ে এর থেকে বাঁচা যাবেনা । এই ধারনা থেকেই আমরা নিয়ে এসেছি হসপিটালইন হোমপ্রোজেক্ট।
করোনা ভাইরাস, সেই সকল ভাইরাস পরিবারের সদস্য যারা আমাদের স্বাভাবিক ঠান্ডা কাশি থেকে শুরু করে SARS( Severe Acute Respiratory Syndrome) ও MERS (Middle East Respiratory Syndrome) করে থাকে। এই ভাইরাস পরিবারের সর্বশেষ আবিষ্কৃত সদস্য হচ্ছে কোভিড ১৯ যেটা মানব দেহে আগে কখনো আগে দেখা যায় নাই।
১। প্রথঃমত সবাই,কারন এই ভাইরাস আগে মানব দেহে সংক্রমন হয় নাই।
২। সংকটপূর্ণ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্তি যেমন এইডস,ক্যান্সারের রুগী,জন্ম থেকে হরমন স্বল্পতার রুগী, যাদের জীবন ধারনের জন্য স্টেরয়েড অপরিহার্য ।
৩। কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্তি যেমন বয়স্ক, গর্ভবতী মা , লিভার ও কিডনী সমস্যাগ্রস্থ রুগী।
৪। যারা বেশি বেশি ভাইরাসে সংস্পর্শে আসছে যেমন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী,পুলিশ, সংবাদ কর্মী ।
১। অফিস আদালতে বা চাকুরী ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পোশাক বাসায় প্রবেশের সাথে সাথে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে দিন বা পোশাকগুলো একটি ব্যাগে দুই দিন পর্যন্ত রেখে দিন ।
২। বাহিরে ব্যবহৃত বেল্ট, ধাতব পয়সা, আংটি, ঘড়ি ও অন্যান্য ধাতব পদার্থ একটি ব্যাগে তিন দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত রেখে ব্যবহার করুন।
৩। প্যাকেট বা কার্টুন আদান -প্রদানে সতর্ক থাকুন। স্পর্শ লাগার পর দ্রুত হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
৪। টাকা লেনদেনে যারা জড়িত তাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে । বাহিরের টাকা চার দিন পর্যন্ত আলাদা জায়গায় রেখে পরে ব্যাবহার করুন।
৫। বাহিরে বার হলে মাস্ক ব্যাবহার করুন। মাথায় পাতলা ক্যাপ ব্যাবহার করুন। বাসায় প্রবেশের পূর্বে এগুলো ঢাকনা যুক্ত বিনে ফেলে দিন।
১। কাপড়ের মাস্ক ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।
২। এক দিনের জন্য একটি সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্কের বাহিরের বা ভিতরের অংশ স্পর্শ করবেন না । দুই পাশের ব্যান্ড ধরে মাস্ক পড়ুন এবং খোলার ক্ষেত্রে ব্যান্ড ধরে খুলুন।
৩। যারা কে এন -৯৫ বা এন-৯৫ মাস্ক ব্যাবহার করতে চান এবং পুনরায় ব্যাবহার করতে চান,তারা ছয় টি মাস্ক ব্যাবহার করবেন। প্রথম থেকে ৬ষ্ঠ দিন পর্যন্ত পর পর ছয়টি মাস্ক ব্যাবহারের পর ছয়টি কাগজের ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। সপ্তম দিনে প্রথম দিনের মাস্ক ব্যাবহার করতে পারবেন। এভাবে দুই মাস পর্যন্ত ব্যাবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই খোলা ও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে ২ এর নিয়ম মেনে চলতে হবে।
১। জ্বর
২। কাশি
৩। তীব্র মাথাব্যথা
৪। ঘ্রান শক্তি লোপ পাওয়া
৫। শ্বাস কষ্ট
৬। আস্বাভাবিক দুর্বল লাগা বা কাজে আগ্রহ হারানো ।
৭। ডায়রিয়া
৮। স্কিনের বিভিন্ন জায়গায় ঘা হওয়া
উপরে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে আইসোলেশনে যান। আইসোলেশনে যাবার ব্যাবস্থা না থাকলে বাসায় মাস্ক ব্যাবহার করুন। কিছু সময় পর পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। বাচ্চা ও বয়স্কদের থেকে দূরে থাকুন। আপনার কাপড় আলাদা রাখুন। মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যে সকল মায়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে বাচ্চা ধরার আগে বা দুধ খাওয়ানোর পূর্বে হাত ধুয়ে নিন ও মুখে মাস্ক পরে নিন। বাচ্চাদের খাওয়ার পাত্রগুলো ধরার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
১. ইলেক্ট্রিক কেটলি
২. কাপ, গ্লাস, প্লেইট
৩. টি ব্যাগ
৪. ছুরি
৫. যে কোন মিনারেল ওয়াটার,১/২লিটার ও ৫ লিটার সাইজ
৬. মধু
৭. কালিজিরা
৮. আদা
৯. চিনি
১০. লবন্গ
১১. লেবু
১২. লবণ
১৩ মাল্টা, কমলা, আপেল এবং অন্য সিজোনাল ফ্রুটস
১৪. প্লাস্টিক / পলি ব্যাগ
১৫. স্যান্ডেল
১৬. টিস্যু
১৭. হাদিস, কুরআন, সাহিত্য বই
১৮ মোবাইল, চার্জার , ল্যাপটপ, মাল্টিপ্লাগ
১৯. এক্সট্রা কাপড়, টাওয়েল,
২০. সাবান –লাক্স, চাকা, ডিটারজেন্ট
২১. সিভিট ফোরট ট্যাব্লেট, ভিটামিন ডি — যদি খেয়ে না থাকে।
২২. প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন, ইনহেলার, পিপিআই, Zinc tablet (pep-2)
২৩. ভিনেগার– গারগল করার জন্য
২৪. এরোসল,
২৫. শুকনো খাবার– মুড়ি, চিড়া, কলা, খেজুর
২৬. আয়না, কাচি
২৭. mask, gloves, hand sanitizer
২৮. মগ, বালতি
২৯. Pulseoxymeter
৩০. খাবার স্যালাইন ১০ প্যাকেট।
Tab. Napa extend
1+1+1
কাশির জন্য
Tab. Fenadin 120 mg
0+0+1 15 days
Tab. Monas 10 mg (যারা শ্বাস কষ্টের জন্য পূর্বে থেকে খেয়ে আসছেন। )
Tab. Vasco / ceevit
1+0+1 15 days
Tab. Xinc/ Pep
Cap. Vital D 20000 IU
0+0+1 5 days
সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যেস যা আইসোলেশনে করে উপকার পাওয়া যাবে
১। হালকা গরম পানিতে লবন দিয়ে গড়্গড়া করা। হালকা গরম ভিনেগার দিয়েও গড়্গড়া করা যায় দিনে ৩-৪ বার
২। আদা, রং চা চিনি ছাড়া প্রয়োজন মত।
৩। গরম পানির ভাব নেয়া দিনে ২-৩ বার।
৪। মধু, লেবুর হালকা গরম পানি পান করা।
৫। অতিরিক্ত গরম পানি অনেক সময় গলার ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে হালকা কাশিতে রক্ত আসতে পারে।
৬। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা, বড় করে শ্বাস নিয়ে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখা, এরপর ছাড়া। এভাবে ৫ বার শ্বাস নিয়ে ৬ষ্ঠ বারে শ্বাস নিয়ে দুটি কাশি দেয়া । এভাবে দিনে ৪-৫ বার করার অভ্যাস করা ।
৭। ঘরের সাধারন ব্যায়াম করা। অধিকক্ষণ শুয়ে না থাকা। নিজের ঘর নিজে পরিস্কার করা ।
৮। সাহস রাখা,আশাহত না হওয়া, বেশি বেশি এবাদত করা বা নামাজ পড়। কোরআন তেলাওয়াত করা।
কোভিড নিয়ে বিশ্বের বড় বড় দেশে চিকিৎসার যে পদ্ধতি চলছে সব জায়গায়ই এখন আক্রান্তের পরপরই বাসায় চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। স্যোসাল মিডিয়ায় অনেক আলোচনা এসেছে বিভিন্ন দেশের আইসিইউ বিশেষজ্ঞদের। যারা এই বিষয়ে চোখ রাখছেন তারা আশা করি খেয়াল করেছেন। মহামারীর এই সময়ে যখন কেউ আক্রান্ত হয় তখন কে বড় কে ছোট খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন। ধনী- গরিবের পার্থক্য এখানে খুবই কম থাকে। আর হাসপাতালে যখন বেড খালি থাকবেনা তখন আপনি আমি কেউ ই আলাদা কোন হিসাব করতে পারব না। সুতরাং এই সময়ে প্যানিক হলে আপনারই বিপদ।
এবার মূল কথায় আসি। কোভিড আক্রান্ত হলে প্রথমেই যে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সাহস হারানো যাবে না। আপনি আমি জানি যে আক্রান্তের খুবই সামান্য ৫-৭% হাসপাতালে যাওয়া লাগে। আর তাদের মধ্যে ১-২% আইসিইউ এর দরকার হতে পারে। তাই আপনি আমি সাহস হারালে কেমনে চলবে। সাহস রাখুন।
১। প্রেসার মাপার যন্ত্র।
২। পালস অক্সিমিটার
৩। থার্মোমিটার
৪। ইনহেলার নেয়ার জন্য একটি ভালো মানের স্পেসার।
৫। স্মার্ট ফোন।
রথ (ROTH) স্কোরের মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারেন আপনার শ্বাস প্রশ্বাস ভালো আছে না কি হাসপাতালে যেতে হবে।
একবার শ্বাস নিয়ে ১ থেকে ৩০ পর্যন্ত গুনে যান । স্টপ ওয়াচের মাধ্যমে দেখে নিতে পারেন। আপনি যদি ৯ এর বেশি গুনতে না পারেন অথবা ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় গুনতে না পারেন তাহলে খারাপ । আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
বাসায় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কোভিড চিকিৎসার জন্য খুবই সহায়ক । আবার অক্সিজেন সিলিন্ডার সতর্কতার সাথে ব্যাবহার না করলে মারাত্নক খারাপ অবস্থা হতে পারে।
১। অবশ্যই সিলিন্ডার রান্না ঘর থেকে দূরে রাখতে হবে।
২। যে ঘরে সিলিন্ডার থাকবে সেখানে কোন অবস্থায় ধূমপান করা যাবেনা।
৩। কোন ধরনের মশার কয়েল জ্বালানো যাবেনা।
৪। যে কোন ধরনের দায্য পদার্থ থেকে দূরে রাখতে হবে।
হাসপাতালে প্রথমত অক্সিজেন দিয়েই রাখা হয়। কাছে কোন সাহায্যকারী পাবেন না, আপনি যেই হোন। সাধারণ সেবা এখানে ব্যাহত, কি কারনে এটা ব্যাহত সেটা আপনি আমি ভালোই জানি। আর মৃত্যু ভয় সব জায়গায়ই কাজ করে। পরীক্ষা নিরীক্ষা দেরিতে হচ্ছে স্টাফ স্বল্পতা, আরো অনেক যৌক্তিক কারনে। সেক্ষেত্রে আপনার মানসিক অবস্থা দূর্বল হয়ে যায়। আপনার নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকেন। মানসিক অবস্থা অটুট রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে যা অতিরিক্ত করা হবে একটি ক্যানুলা । এই রোগের আপডেটেড চিকিতসায় ব্যবহৃত হওয়া কিছু ওষুধ antibiotics, low Molecular wt heparin, fluid. Ramdesivir, Tocilizumab, etc.যেটাও বাসায় করা সম্ভব দক্ষ চিকিৎসকের সাথে ফোনে পরামর্শ করে। বরং সাধারণ বিষয় বা অভ্যাস গুলো যা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি এনে দিতে পারে সেটা হাসপাতালে পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
১. মারাত্মক দুর্বল হয়ে গেলে
২ .জ্বর বেড়ে যাচ্ছে বা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে।
৩. মারাত্নক ডায়রিয়া হলে ।
৪. শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বা পালস অক্সিমিটারের রিডিং অক্সিজেনসহ ৯০ এর নিচে চলে গেলে।
৫. বুকে মারাত্নক চাপ বা ব্যথা অনুভব করলে।
৬. মুখ বা জিহবা নীল হয়ে গেলে। এই পর্যায়ে সাধারণত খুব কম রুগিই পাওয়া যায়।
আইসিইউ তে যে খুব বেশি কিছু করা যায় সেটা ভাবা ভূল। আইসিইউ স্বল্পতা, অপ্রতুল চিকিৎসক স্টাফ, যন্ত্রপাতির অভাব, জনবল সংকট, পরিক্ষা করানোর ঘাটতি, সব মিলিয়ে আইসিইউ তে আমাদের কিছু করার থাকে না। অনেকেই মনে করেন একটা আইসিইউ বেড কত সুবিধা এনে দিতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে এত এত সুবিধা থাকা সত্বেও খুব কম সংখ্যক রুগীকে ফেরাতে পারছে। আমাদের এই অবস্থায় বেশি আশা করা যায় না।
সাহস রাখুন, মনোবল অটুট রাখুন। আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকুন, বাসায় থাকুন। ইনশা আল্লাহ আমাকে, আপনাকে আল্লাহই রক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ সকলকে এই মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করুন।
**আরও পড়ূন কাশি দূর করার ৭টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
ডাঃ মোহাম্মদ আহাদ হোসেন
কনসালটেন্ট
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
2020 topbanglanews24