আষাঢ়ের শুরু থেকে গত কয়েকদিনের টানা ভারিবর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। শুক্রবার বিকালে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলীতে যান। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ডিএনডির ভেতর ২০ লক্ষ মানুষ অসহনীয় কস্ট ভোগ করছে। যারা পানিবন্দ হয়ে আছেন। করোনা না হলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। বাংলাদেশে করোনা এসেছে।
এই করোনার কারণে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় যে কাজ শুরু করেছিলেন আমাদের দেশপ্রমিক সেনাবাহিনীর মাধ্যমে, সেই কাজটি গত তিন মাস ধরে স্থগিত অবস্থায় থাকার কারণে এই পুরো এলাকা এখন পানির নিচে চলে গেছে। শামীম ওসমান বলেন, আমি বৃহস্পতিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়, এবং সেনাবাহিনী যারা ডিএনডির জলাবন্ধতা নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার রাত থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, এসময় শ্রমিক পাওয়া মুশকিল, তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন, যেই পাম্প সম্পন্ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর চালু হওয়ার কথা বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহদাকার সেই পাম্প আজ (শুক্রবার) চালু হয়েছে। আশাকরি এই দুটি পাম্প চালু থাকলে এবং নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিএনডির ভেতর জমে থাকা পানি নিস্কাশন হয়ে যাবে। শামীম ওসমান আরও বলেন, আমি ডিএনডির পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের ছবি সংগ্রহ করে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। এবং বলেছি প্রকল্পের কাজটি পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে হলে আরো টাকার প্রয়োজন। যদিও এই করোনা পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জিডিপির ৩ পয়েন্ট সিক্স পার্সেন্ট অনুদান দিয়ে দিয়েছেন। তারপরও প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আগামী ২৫ জুন মিটিং ডাকা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে আমাদের ডিএনডির প্রকল্পকে পরিপূর্ন করার জন্য যে পরিমান আরও টাকার প্রয়োজন আমি আশা করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাতির জনকের কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুস্থ রাখেন ও হায়াতে তাইয়্যেবা দান করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে যারা আছেন তারা যদি সবাই ভালো থাকেন ইনশাআল্লাহ বাকি টাকাও আমরা পেয়ে যাবো। শামীম ওসমান বলেন, একটা বিষয় আমাদের বঝুতে হবে আমরা একটা মহাসংকট অতিক্রম করছি। তারপরও যারা কাজ করছেন এবং জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া আমাদের কিছু করার নাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যাতে সবাইকে সুস্থ রাখেন। আর সবার কাছে একটা অনুরোধ করবো যে এখন কিন্তু পিক টাইম, এই পিক টাইমে আমরা যতই লক ডাউন, রেড জোন, গ্রিণ জোন ইয়োলো জোন যেই জোনই বলি না কেনো, কোন জোনই আমাদের সেভ করতে পারবে না যদি না আপনারা নিজেরা নিজেদের সেভ না করেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা কথাই বলছেন, খাদ্যের অভাব হবে না। কোন কিছুর অভাব হবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি নিজেরা সচেতন থাকি, উদাসীন না হই আমার দৃঢ় বিশ্বাস ইনশআল্লাহ আমরা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো। শামীম ওসমান কোরআনের উদ্ধুতি দিয়ে বলেন, আমাদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কালকে হয়তো আমিও না থাকতে পারি। যদি না থাকি আগের থেকে ক্ষমা চাই সবার কাছে। কারণ ক্ষমা চাওয়া সুযোগ হয়তো পাবোই না। এমন একটা অবস্থা তৈরী হয়েছে কেউ কারো লাশের জানাজাও পড়ছে না। সেই পরিস্থিতিতে আমরা সবার জন্য সবাই দোয়া করি। শামীম ওসমান বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আমি কোন ব্যক্তিকে, জাতিকে ওই বোঝা দেই না যা সে বহন করতে পারে না। সেই কারণে হয়তো করোনায় আমাদের মৃত্যুর হারটা কম। তবে আমি অনুরোধ করবো মৃত্যুর হার কম দেখে বাহাদুরি দেখানোর কোন কারণ নাই। আমি নিজে যাতে অসুস্থ না হই, এবং আমার অসুস্থতায় আরেকজন যাতে সংক্রামিত না হয়। এই গুনাটা যেন আমার দ্বারা না হয়। আমরা সেই মোতাবেক চলবো। এরপর তিনি শিমরাইল পাম্প হাউজ পরির্দশনে যান। এবং দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষা করে বিকাল সোয়া ৫টায় দুটি পাম্প চালু হওয়ার পর তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ডিএনডির প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল মাসফিকুল আলম, প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার মেজর কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদসহ প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, নাসিকের প্যানেল মেয়র ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান মতি, নাসিক কাউন্সিলর আলী হোসেন আলা, রুহুল আমিন মোল্লা, আরিফুল হক হাসান, ইফতেখার আলম খোকনসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরআগে জুম্মার নামাজের পর শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে স্বাস্থবিধি মেনে প্রেস ব্রিফিং করে। সেখানে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৫০ বার যোগাযোগ করে প্রকাশ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় আড়াই মাস আগে ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে একটি ল্যাব হবে এবং ১০ বেডের একটা আইসিইউ হবে। আসহায়ত্বের সাথে বলছি, আমি আবাক এবং বিস্মিত যে এই আইসিইউ এখন পর্যন্ত হয় নাই। ‘এটা কোন রকেট সায়েন্স না’ বলেও মন্তব্য করেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে আইসিইউ চালু করার বিষয়ে সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, আমি মন্ত্রী মহাদয়কে জানিয়েছি কিন্তু কাজটা তো মন্ত্রীর না। মন্ত্রীর কাজ নির্দেশ দেওয়া, যাদের নির্দেশ দিবেন তারা কাজটি করবেন। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অসংখ্যবার কল করে টায়ার্ড হয়ে গেছি। বৃহস্পতিবারও জানানো হয়েছে যে, আগামী রোববার এটি চালু হবে। সরকারি নির্দেশ থাকার পরও নারায়ণগঞ্জের দু’টি হাসপাতাল করোনা রোগীদের ভর্তি নিচ্ছে না উল্লেখ করে সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, ‘প্রো-অ্যাকটিভ ও আল বারাকা নামে নারায়ণগঞ্জের দুটো হাসপাতাল আছে। এদের আইসিইউ বেড রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের সেবা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এদের সিভিল সার্জন দুইবার চিঠি দিয়েছেন কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোন রোগী ভর্তি নেন নাই। এই মহামারীর মুহুর্তে ওনারা এটাকে বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছেন। তারা প্রথমে ৭০ কোটি এবং পরবর্তীতে ২৬ কোটি টাকা দাবি করেছেন। আগামী সোমবার রাতের মধ্যে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত যদি না পাই তাহলে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে রোগী ভর্তি করানোর মতো ব্যবস্থা করবো।’ প্রেসব্রিফিং শেষে তিনি করোনা দূর্যোগকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্বকপালনরত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদ কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পিপিই, এন-৯৫ মাস্কসহ বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দেন সিনিয়র সাংবাদিকদের হাতে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
2020 topbanglanews24