বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক কাজ করছেন বিভিন্ন দেশে। করোনা মহামারির কারণে দেশগুলোয় দেওয়া হয়েছে লকডাউন। ফলে ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। এর প্রভাব পড়েছে শ্রমিকদের ঘারে। কেউ হারিয়ে চাকরি। আবার কেউ পাচ্ছেন না বেতন-ভাতা।
এমন অবস্থায় আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি এসব শ্রমিকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবের রিয়াদে একটি সেলুনে গত আড়াই বছর ধরে কাজ করতেন বিধান চন্দ্র শর্মা। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সৌদি সরকার লকডাউন ঘোষণা পর সবার আগে সেলুনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় তিন মাস ধরে কর্মহীন হয়ে আছেন তিনি। দেশে টাকা পাঠানো দূরে থাক। তিন বেলা খাওয়ার মতো টাকাও এখন তার কাছে নেই। কবে চাকরি পাবেন সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন তার মতো এমন অসংখ্য শ্রমিক।
শর্মা বলেন, ‘দোকান বন্ধ মানে চাকরি নাই। মালিকও খোঁজ-খবর নেয় না। এম্বেসির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারতেসি না। খুব কষ্ট করে খাইতেসি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, শর্মার পাঠানো টাকার ওপর নির্ভর করে চলে বাংলাদেশে থাকা তার আট সদস্যের পরিবার। গত দুই মাস কোন টাকা না পাঠানোয় এই পরিবারটিও অভাব অনটনের মুখে পড়েছে। স্বামী চাকরি হারানোয় সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না স্ত্রী শুক্লা রানী শীল।
তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ির চিকিৎসা আমাদের খাওয়া দাওয়া সব স্বামীর টাকায় চলে। আজকে তিন মাস স্বামী কোন টাকা পাঠাইতে পারছে না। ধারকর্য করে চলতেসি।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলায়, বিশ্বের ১৬৯টি দেশে বাংলাদেশের এক কোটি ২০ লাখের মতো শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশে থাকে।
এই দেশগুলোয় গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন চলায় তাদের তেল-নির্ভর অর্থনীতি এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে শ্রমিকদের দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা ফ্রি ভিসায় আছেন তাদেরও কোন কাজ নেই। আবার যাদের চাকরি আছে তারাও বেতনের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পাচ্ছেন না। ভবিষ্যতে এই টাকা পাবেন কি না সেটারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকি বলেন, ‘তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, এসব দেশ অভিবাসী শ্রমিক কমিয়ে সেই খরচ কমানোর চেষ্টা করবে।’
এই মানুষগুলো মসজিদে থাকছেন এবং মসজিদের চ্যারিটির খাবার খেয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
2020 topbanglanews24