সাহেদ কামাল সোহেব
পর্বঃ১
হাতিয়া উপজেলাকে বলা হয় চলমান দ্বীপপুঞ্জ। এখানে আছে প্রায় ৭০টি ছোট বড় দ্বীপ। এ দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের বৈশিষ্ট হলো ক্রমানয়ে বঙ্গপ সাগরের দিকে হেটে চলা।
জাহাজমারা হাতিয়া উপজেলার ১০নং ইউনিয়ন। বাণিজ্যিক ও পর্যটনের জন্য ইউনিয়নটি প্রসিদ্ধ। জাহাজমারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুরে নিমতলী সমুদ্র সৈকতটি অবস্থিত।
মহাবিশ্বগুলো স্থির কোন অবস্থান নাই। ক্রমাগত বর্তমানে সম্প্রসারিত হচ্ছে, সেই সম্প্রসারনে পৃথিবীর মাঝে আসছে নানা পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের হাত ধরে নিমতলী সমুদ্র সৈকত।
ইতিহাস যেমন বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে বলে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস প্রায় ২৫ লক্ষ বছর। তেমনি ইতিহাস বলে হাতিয়ার বয়স ৬ শত হাজার বছরেও বেশি। কিন্তু এ ৬ শত হাজার বছরের পুরোণ দ্বীপটির বয়স কখনো হাজার অতিক্রম করেনি। জাহাজমারা ইউনিয়নটির বয়স এখনো দুই শত বছর হয়নি।
বর্তমানের নিঝুম দ্বীপটিও এক সময় জাহাজমারা ইউনিয়নে একটি ওয়ার্ড ছিল, এখন আলাদা একটি ইউনিয়ন। তা হলে বুঝতেই পারছেন হাতিয়া ক্রমানয়ে সমুদ্রের দিকে হেঁটে চলেছে। আর অতীতে হাতিয়ার মানুষেরাও পায়ে হেঁটে চলাচল করতো। গরুর গাড়িই এ অঞ্চলের প্রথম যানবাহন। দ্বীপটির হেঁটে চলা আর অধিবাসীদের হেঁটে চলা থেকে দ্বীপটির নাম করণ হয় হাতিয়া, এর দ্বিমতও আছে।
নিমতলী সমুদ্র সৈকতটি নানান রুপ, গুণ আর সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট নিয়ে মেঘনা আর বঙ্গপ সাগরের মোহনায় জেগে উঠে।
কেন নিমতলী সমুদ্র সৈকতটি সম্পূর্ণ আলাদা? এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় বলা যাবেনা। আবার যদি বলা হয় দ্বীপটি পরিদর্শন করে আপনার কেমন অনুভব হয়েছে? তার উত্তর ও এক বাক্যে বলা যাবেনা।
আর এ দুটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমরা বার বার ছুটে গিয়েছি নিমতলী সমুদ্র সৈকতে কাছে।
খুব কষ্ট হতো কাঁদা মাটির ভূমির উপর দিয়ে ৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে, চোরা খালে ডুবে হাবুডুবু খেয়ে নিমতলী সমুদ্র সৈকতে গিয়ে হৃদয় প্রাণে আপার আনন্দ পেয়ে কত দুঃখ ভুলেছি আমরা।
কিন্তু এখন আর আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা। কারণ হাতিয়া উপজেলার আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী, হাতিয়া উপজেলার বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও জাহাজমারা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এডভোকেট মোঃ মাসুম বিল্লাহ সহ যৌথ ভাবে ব্যাক্তি গত উদ্যোগে রাস্তা ঘাট নির্মান, বিশ্রামাগার সহ নানা সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে নিমতলী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটকের আনন্দ উপভোগ করা সুব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টি হাতিয়া উপজেলা ছাত্র লীগের সহ-সভাপতি ফরিদ শেখ আমাদেরকে নিশ্চিত করেন।
নিমতলী সমুদ্র সৈকতটি বিশ্বের অন্য সকল সৈকত থেকে আলাদা এ ভাবেঃ আপনি যখন নিমতলী বাজার থেকে সৈকতের দিকে অগ্রসর হবেন, তখন আপনার দুপাশে ম্যানগ্রোভ বন, বনের মধ্যে রয়েছে কেওড়া বৃক্ষ, ঘোয়া গাছ, বুরখুলা, কেকাঁটার গুচ্ছ। আপনি যখন কেকাঁটার নীল ফুলের দিকে হাত বাড়াবেন, তখন মনে পড়বে “কাঁটা হেরিয়ে ফুলের শোভা সুখকর নয়।” নানা বনফুলের ভেতরে দেখবেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার, হরিণের পাল। কুকুর, শেয়াল আরো আছে সাপ। বক, ওয়াক, টিয়া, দোয়েল, কোয়াল, ছক্কা সহ নানা রঙ্গের পাখি।
বন অতিক্রম করে যখন আপনি নিমতলী সৈকতে দিকে পা বাড়াবেন, তখনি চোখে পড়বে বিশাল এক মাঠ, সবুজ ঘাসের গালিচা আপনাকে স্বাগতম জানাবে। দৃষ্টি প্রশস্ত করে সামনে তাকালে আপনার চোখে পড়বে আরেটি ছোট ম্যানগ্রোভ বন।
যখন আপনি সৈকতে কাছে যাবে তখন বালুর ভেতরে দেখতে পাবেন সিলিকনের চকচকে হাসি।
আপনি যখন নিমতলী সৈকতের প্রশস্ততা উপভোগ করবেন, তখন আপনার দৃষ্টিতে ধারা দিবে ঝাঁকে ঝাঁকে ছক্কা পাখি পানি ছুয়ে উড়ে যাওয়ার দৃর্শ্য। হাতিয়ার ভাষা এ ঝাঁককে বলা হয় “চালি চালি ছক্কা উড়ে।”
চলবে…..
Your email address will not be published. Required fields are marked *
2020 topbanglanews24