দুই
উন্নয়ন কৃষি ও শিল্পে, যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের সুগঠিত কাঠামোকে বুঝায়। বর্তমানে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় করতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ঐতিহ্যবাহী, কৃষান কৃষাণীদের পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত চাল, চালের গুড়া,চিড়া প্রভৃতি তৈরির প্রধান মাধ্যম কাঠের ঢেঁকি।
শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক উপায়ে চাল,চালের গুড়া,চিড়া ইত্যাদি তৈরি করা হয়।কিন্তু যে বিষয়টি খুবি গুরুত্ব পূর্ণ্য তা হলো ঢেঁকিতে যে চাল তৈরি করা হয় তা যন্ত্রের মাধ্যমে তৈরি চালের থেকেও বেশী পুষ্টিকর।কারন ঢেঁকিতে তৈরি করা চালে উপরে লালচে একটা আবরণ থাকে যায়।অথ্যাৎ খোসা ফেলে দেওয়ার পর চালের গায়ে লাল আবরণ থাকে।যা এক মাত্র ঢেঁকিতে চাটা চালের মাধ্যমে সম্ভব, যাতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ, খনিজ পুষ্টি, ভিটামিনউসহ নানান স্বাস্থ কর উপাদান। যা ডায়বেটিস, হৃদরোগ, কোলেস্টেরলের সমস্যা,রক্তচাপ, প্রদাহ,ক্যান্সার ইত্যাদির কমায়, যা প্রমানিত হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়।
আন্যদিকে ইঞ্জিন চালিত মেশিনের মাধ্যমে শুধু চালের উপরের লালচে আবরণকে তুলে ফেলা হয়না, চাল কেট চিকন করা হয়। অর্থ্যাৎ মোট চালকে চিকন চালে রুপান্তর করে বেশি মূল্য আদায়ের অপকৌশলও করা হচ্ছে। গ্রামে মানুষ মানুষে খোটা দেওয়ার জন্য বলে “কে মোটা চালের ভাত খায় আর কে চিকন চালের ভাত খায় তা আমরা জানি”।অতচ মোটা চালের ঘনত্ব চিকন চালের থেকে বেশি, যা কম খেয়েও বেশি পুষ্টি পাওয়া য়ায়।
ঢেঁকি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকির ছন্দময় শব্দও।
ঢেঁকি দিয়ে চাল চাটা, চিড়া তৈরি, চালের গুড়ো তৈরি, আটা, পায়েসের চালের গুড়ো,খির তৈরির চাল, কুমড়ো আর কলাই দিয়ে সুস্বাদু ডালের বড়ি বানানোর কাজও করা হতো। অঙ্কুরোদগম ধানকে ঢেঁকিতে পিসে রস বাহির করে বর্ষা উৎসবের পাঁচা পিঠা দক্ষিণ আঞ্চলের একটি ঐতিহ্য।
ঢেঁকির প্রচলন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসলেও কিছু কিছু অঞ্চলে পোষ মাসে আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নে এর ব্যবহার দেখা যায়। শীতের পিঠা পুলি তৈরির মুল উপাদান চাল গুড়ো তৈরির জন্য কাঠের ঢেঁকির কিছুটা কদর দেখা যায় ।
এক সময় দেখা যেতো মধ্যবিত্ত পারিবারে ঢেঁকিতে চাল অথকা চালের গুড়ো করার জন্য দরিদ্র পরিবারগুলো ভিড় জমাতো। একটি সোহার্দ পূর্ণ্য সম্পর্কও ঢেঁকির মাধ্যমে তৈরি হতো। দরিদ্র মহিলার কাজ পেত ঢেঁকিতে বারা দেওয়ার।
ঢেঁকির কাজ অনেকটা কষ্টকর তাই পরিহস বিদ্রুপ করে বলা হয় ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। যদি ঢেঁকিতে ইঞ্জিন ব্যবহার করা যায়, তা হলে বিদ্রুপের এ প্রবাদ থাকবে না। আমাদের ঐতিহ্যবহী ঢেঁকে তখন টিকে থাকবে, তেমনি আমরা ফিরে পাবো পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত সুস্বাদু খাবার,পানিয়। ফিরে পাবো ধনী গরীবের সোহার্দ পূর্ণ্য সম্পর্কের নিবিড় বন্ধন।
গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে পূর্ব পুরুষের মাটির, চন-খড়ের ঘর-বাড়ি টিন ইট পাথরে নির্মিত হচ্ছে। আর তাতে জায়গা হচ্ছেনা ঢেকি রাখার। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
2020 topbanglanews24